এভাবে চলতে থাকলে তো মানুষ বিরক্ত হবে : সোহেল রানা

সোহেল রানা

ছিলেন ছাত্রনেতা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এলেন চলচ্চিত্রে। মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা যতটা রাজনীতির মানুষ, ততটাই চলচ্চিত্রের। সম্প্রতি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন সুদীপ কুমার দীপ।

ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০৯ সালে এসে যোগ দিলেন জাতীয় পার্টিতে। আবারও নতুন দল গঠন করতে চলেছেন।

নতুন দলটির আদর্শগত দিকগুলো জানতে চাই।

আমরা তো মাত্র ঘোষণা দিলাম। এখনো দলের নামই চূড়ান্ত করতে পারিনি। ২৫টি নাম টেবিলে জমা পড়েছিল।

সেখান থেকে তিনটি নাম পছন্দ করেছিলাম। পরে দেখলাম ‘জাতীয় ইনসাফ পার্টি’ ও ‘জাস্টিস পার্টি’ নাম দুটি আগেই নিবন্ধিত আছে। এখন বাকি যে নামটি সেটি নিবন্ধিত কি না দেখি।

আর আদর্শগত দিক বলতে গেলে প্রথমে বলতে হবে, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও আমরা যে অধিকারগুলো পাইনি সেই অধিকারগুলো সাধারণ মানুষকে পাইয়ে দিতে চাই। যেমন : নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে পরিচালনা করার সুযোগ করে দেওয়া।সাধারণ মানুষের জীবন যাপনকে সহজ করার জন্য আইন-শৃঙ্খলাকে উন্নত করা, বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাই, কেউ সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন। এক মাসের মধ্যে আমরা ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করব। তারপর আমাদের ইশতেহারসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করব।

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আপনি কী কী সমস্যা দেখেছেন, যে কারণে দুটি দলই ছেড়ে এসেছেন?

আদর্শগত জায়গাটাতে ছাড় দিতে রাজি হইনি কোনো দিন। আমাদের নতুন দলে কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদরাও থাকবেন। আমার গ্রামে এখনো এমন মানুষ আছেন, যিনি এক মুজিব ও এক আওয়ামী লীগে বিশ্বাসী। তাঁদের বঞ্চিত হতে দেখেছি বছরের পর বছর। তাঁদের আদর্শের কাছে হাইব্রিড নেতারা নস্যি। যে বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল [২০০৯] সে বছরই আমি দলটি ছেড়েছিলাম। তাঁদের অনেক কর্মকাণ্ড পছন্দ হচ্ছিল না। আমার আদর্শের সঙ্গে যাচ্ছিল না। একই কারণে জাতীয় পার্টিও ছেড়েছি [২০২০ সালে]।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসের কর্মকাণ্ড কেমন দেখলেন?

পাঁচ-ছয়জন উপদেষ্টা বাদে আর কাউকে দৃশ্যমান মনে হচ্ছে না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে গত সরকারের পতন হয়েছে। অনেক রক্তপাতের পরে এই বিজয় এসেছে। এখন যাঁরা দেশ চালাচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু ইলেকটেড নন। ফলে সবার আগে তাঁদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কানেক্ট হতে হবে। তাঁদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে। সেটা কতটুকু হচ্ছে আপনারাই বলতে পারবেন! ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে, দেশে একের পর এক বন্যায় মানুষ দিশাহারা, এই সময় পলিথিন নিষিদ্ধ করাটা খুব জরুরি বলে মনে হয়নি। দ্রব্যমূল্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ঊর্ধ্বে চলে যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। এভাবে চলতে থাকলে তো মানুষ বিরক্ত হবে, অন্তর্বর্তী সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

আপনি চলচ্চিত্রের মানুষ, এ মাধ্যমটি অনেক বছর ধরেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন?

চলচ্চিত্রের উন্নয়নে চলচ্চিত্রের মানুষদেরই দরকার। এখন যেটা নেই বললেই চলে। একের পর এক কমিটি গঠিত হচ্ছে। চলচ্চিত্রের মানুষ কয়জন আছেন সেই কমিটিতে! এখানকার মানুষই ভালো জানেন এই সমস্যার অন্তরায় কী। তাঁদের কাঁধে দায়িত্ব না দিলে চলচ্চিত্রের উন্নয়ন অসম্ভব।

দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। এখন শারীরিক অবস্থা কেমন?

সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। চোখের সমস্যা এখন আর নেই। হার্টে রিং পরিয়েছি। রুটিন করে ওষুধ খাই। তবে বছরে একবার করে চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুর যেতে হবে। এখন তো বয়স হয়েছে। এসব সমস্যা মেনে নিয়েই জীবন যাপন করতে হবে।

অভিনয়ে আবার কবে দেখা যাবে আপনাকে?

ছয় বছর আগেই তো অভিনয় ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর ফেরার তেমন আগ্রহ নেই। তবে স্বাধীনতার ওপর কোনো ছবি হলে, আমার বয়সের সঙ্গে যায়—এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলে আপত্তি নেই। যেমন কেউ যদি আমাকে জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য প্রস্তাব দেন, করব।

LEAVE A REPLY