মুইজ্জুর ভারত সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বি : এএফপি

ভারতে পাঁচ দিনের সফর শুরু করেছেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুইজ্জু। গত বছরের শেষ দিকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে এলেন তিনি। আজ সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন মুইজ্জু। 

সাম্প্রতিক সময়ে মালদ্বীপকে নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

পাঁচ দিনের (৬ থেকে ১০ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় সফরকালে মুইজ্জু ভারতের কাছে তার দেশের জন্য ‘বেল আউট’ চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ মালদ্বীপ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪০ মিলিয়ন ডলারে এ নেমে গেছে। যা দিয়ে এক থেকে দেড় মাস দেশটি আমদানি করতে পারবে। ঋণ খেলাপির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

 এমন অর্থনৈতিকভাবে টালমাটাল পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়ে মোদির কাছে সাহায্য চাইবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  এ জন্যই মুইজ্জুর ভারত সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলা হচ্ছে। 

ইতোমধ্যে ভারতকে মালদ্বীপের আর্থিক সংকটের কথা জানানো হয়েছে। মুইজ্জু বিবিসিকে একটি ইমেল সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘ভারত আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে সচেতন এবং আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে একটি দেশ।

তারা আমাদের বোঝা কমাতে এবং আমাদের মুখোমুখি চলে আসা চ্যালেঞ্জগুলোর ভাল বিকল্প এবং সমাধান খুঁজতে সর্বদা প্রস্তুত।’ 

বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, দিল্লির প্রতি মুইজ্জুর বর্তমান সুরটি এক বছর আগে তার নির্বাচনী প্রচারের সময় দেওয়া বক্তৃতা থেকে অনেক দূরে। ওই সময় তার প্রচারাভিযানটি ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতির ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল। সেখানে বলা হয়, দিল্লিকে অবশ্যই  এই দ্বীপ দেশ থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।

মুইজ্জু ভারতকে দেশে অবস্থিত প্রায় ৮০ জন সেনা প্রত্যাহারের আল্টিমেটামও দিয়েছিলেন।দিল্লি জানিয়েছে, সেনারা দুইটি উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার এবং বহু বছর আগে অনুদান দেওয়া একটি ডর্নিয়ার বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য মালদ্বীপে অবস্থান করছে। শেষ পর্যন্ত দুই দেশই সমঝোতায় পৌঁছে ভারতীয় বেসামরিক টেকনিক্যাল স্টাফ দিয়ে সেনা নিয়োগে সম্মত হয়।

বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় মুইজ্জু বলেছিলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে কোনো পার্থক্য খোলা আলোচনা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।’ ভারতীয় ত্রাণ প্যাকেজ দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করবে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

গত মাসে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স মালদ্বীপের ক্রেডিট রেটিং (ঋণমান) কমিয়ে দেয়। সংস্থাটি বলে,মালদ্বীপের ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাস্তবিক অর্থে বেড়েছে। কিন্তু মুইজু বিবিসিকে বলেছেন, মালদ্বীপ ঋণ খেলাপির মুখোমুখি হচ্ছে না।

তিনি আরো যোগ করে বলেন, দেশের সংকট পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রোগ্রামে যোগ দেবে না।  ‘আমাদের নিজস্ব স্বদেশী এজেন্ডা আছে’ বলে তিনি জানান। আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুড ‘স বলেছে, ‘(বিদেশি) রিজার্ভ সরকারি বাহ্যিক ঋণ পরিষেবার প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম এবং ২০২৫ ও ২০২৬ সালে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি।’

মুইজ্জু রিজার্ভ সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য অর্থ কোথায় পাবেন তা স্পষ্ট নয়। তাই তার দিল্লি সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত ইতিমধ্যেই বিভিন্ন অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য মালদ্বীপকে ১.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।

মুইজ্জু ২০২৩ সালের নভেম্বরে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মালদ্বীপ ও দিল্লির মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি তুরস্ক এবং চীন ভ্রমণ করেছিলেন। বিশেষ করে গত জানুয়ারিতে তার চীন সফরকে নয়াদিল্লির প্রতি মালদ্বীপের একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ হিসেবে দেখা হয়েছিল। কারণ মালদ্বীপের পূর্ববর্তী নেতারা নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম দিল্লি সফর করেছিলেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে মুইজ্জু সরকার মালদ্বীপে জিয়াং ইয়াং হং-৩ নামে একটি চীনা গবেষণা জাহাজের পোর্ট কলের অনুমতি দেয়, যা দিল্লির অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ এটিকে তথ্য সংগ্রহের মিশন হিসেবে দেখেছিলেন, যা পরবর্তী তারিখে চীনা সামরিক বাহিনী সাবমেরিন অপারেশনের জন্য ব্যবহার করতে পারে।

কিন্তু মুইজ্জু তখন বলেন, আমি যেদিন দায়িত্ব নিয়েছি সেদিনই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিষ্কার করে বলেছি। এটি হচ্ছে ‘মালদ্বীপ প্রথম’ নীতি। অন্য জাতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস, হস্তক্ষেপ না করা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির নীতি দ্বারা পরিচালিত হবে।

মালদ্বীপে প্রতি বছর বহু ভারতীয় পর্যটক ঘুরতে যান। দেশটির অর্থনীতির অন্যতম ভিত পর্যটন। মালদ্বীপের তিনজন কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করার পর ভারতে বিতর্ক শুরু হয়। তখন ভারত থেকে বয়কটের ডাক ওঠায় মালদ্বীপ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। পরে সে দেশের মন্ত্রীরা ক্ষমা চান। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।

প্রায় ১ হাজার ২০০টি প্রবালদ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ গঠিত। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার। ছোট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ তার বেশির ভাগ খাদ্য, অবকাঠামো নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল।

সূত্র : বিবিসি

LEAVE A REPLY