তাসনিয়া ফারিন
সাময়িক স্থিতাবস্থা কাটিয়ে জমে উঠছে দেশের ওটিটি আঙিনা। এর পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখছে ভিকি জাহেদের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘একটি খোলা জানালা’ ও সিরিজ ‘চক্র’। দুটিতেই আছেন তাসনিয়া ফারিণ।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ‘চক্র’ মুক্তি পেয়েছে।
দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন?
কেবল [১০ অক্টোবর] তো মুক্তি পেল। এখনই বলা মুশকিল। আরো কয়েকটা দিন যাক, তখন বোঝা যাবে।
২০ পর্বে এসেছে ‘চক্র’।
এতগুলো পর্ব করার কারণ কী?
এটা ৪০ পর্বের টিভি সিরিয়াল হওয়ার কথা ছিল। সেভাবেই আমরা কাজ করেছিলাম। যেহেতু এখানে স্পর্শকাতর কিছু বিষয় আছে, সে জন্য এটাকে ওটিটি প্ল্যাটফরমে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আর ওটিটির জন্যই কাটছাঁট করে ২০ পর্ব বানানো হয়েছে।
এ সিরিজের মূল রেফারেন্স আদম পরিবার, যে পরিবারের ৯ সদস্য একসঙ্গে ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করেছিল বলে জানা যায়।
রহস্যজনক এই পরিবারের কথা আপনি প্রথম কবে শুনেছিলেন?
ভিকি ভাইয়ের কাছ থেকেই প্রথম জেনেছি। এর আগ পর্যন্ত জানতাম না। ২০২০ সাল থেকেই ভিকি ভাইয়ের সঙ্গে কাজটি নিয়ে কথা হচ্ছিল। পরে আমিও ব্যক্তিগতভাবে একটু রিসার্চ করেছি, দেখেছি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
আর আদম পরিবারের ওই ঘটনা হয়েছে কি হয়নি, তা নিয়েও বিতর্ক আছে। যেহেতু ওই পরিবারের কেউ বেঁচে নেই, সেখান থেকে আমরা ভেবে নিতে পারি যে ঘটনাটি ঘটেছে। তবে আমি খুব বেশি অবাক হইনি। পৃথিবীতে অনেক কিছুই ঘটে।
‘একটি খোলা জানালা’ ও ‘চক্র’ যথাক্রমে হরর-থ্রিলার ও ডার্ক থ্রিলার। দেশে এসব জনরার দর্শক কেমন?
কোনো জনরার দর্শকই তৈরি থাকে না। এমন কেউ নেই, যিনি কেবল এক জনরার কাজই দেখেন। ‘একটি খোলা জানালা’ সাম্প্রতিক সময়ে ওটিটির অন্যতম সফল কনটেন্ট। অর্থাৎ আমার রোমান্টিক কাজ [কাছের মানুষ দূরে থুইয়া] যেমন সফল হয়েছে, থ্রিলারও [কারাগার] হয়েছে। সব ধরনের কাজ করতে হবে, অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমি এটাই বুঝি। আমি জনরা নিয়ে ভাবি না।
ভিকি জাহেদের সঙ্গে পর পর দুটি প্রজেক্ট করলেন। তাঁর কাজের দক্ষতা পর্দায় তো দেখা যায়, কিন্তু সেটে আসলে কেমন তিনি?
ভিকি ভাইয়ের টিম অনেক গোছানো। সবাই খুব ঠাণ্ডা মেজাজের মানুষ। সিরিজটা করতে অনেক লম্বা সময়ে লেগেছে, প্রায় তিন বছর। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে করতে হয়েছে। তবে হি ইজ ভেরি ওয়েল রিসার্চড। কোনো সংলাপ লিখলে সেটার পেছনে যথেষ্ট কারণ ও যুক্তি থাকে। কোনো দৃশ্য বা সংলাপ নিয়ে খটকা লাগলে জিজ্ঞেস করতে পারি, শিল্পীদের প্রশ্ন করার সুযোগও রাখেন তিনি। সব মিলিয়ে তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা বরাবরই ভালো।
নানা বাধা-বিপত্তির কথা বলছেন। সেটা কী রকম?
অনেক কিছুই অস্বাভাবিক ছিল। শুটিং চলাকালীন অনেক মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি আমরা। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। বয়োজ্যেষ্ঠ চরিত্রের জন্য একজনকে নেওয়া হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে কয়েক দিন শুটিং করলাম। অর্ধেক পথে গিয়ে তিনি মারা গেলেন। সে চরিত্রে আরেকজন বয়স্ক নারীকে নেওয়া হয়, আগের দৃশ্যগুলো পুনরায় ধারণ করা হলো। কিন্তু তিনিও মারা যান! এ ব্যাপারগুলো দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। শুটিংয়ে গেলে কেমন যেন নেগেটিভ এনার্জি ফিল করতাম। আমি অনেকবার তৌসিফ ভাইয়াকে [চক্রতে তাঁর সহশিল্পী] বলেছিলাম, এই সিরিজে কাজ করা বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না! আমিও কয়েকবার অসুস্থ হয়েছি। একবার এমন হয়েছিল, একদম সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় শুটিংয়ে গিয়েছি, লঞ্চে একটি শট দিতে গিয়ে হুট করে মাথা ঘুরে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ভিকি ভাইয়ার সঙ্গেও অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটেছে, দুইবার তাঁর পা ভেঙেছে, অ্যাকসিডেন্ট করেছেন। সবার ওপরেই আসলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।
আপনি প্রায়ই ভ্রমণে যান। অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। বলা হয়, নেচার ইজ দ্য বেস্ট টিচার। আপনিও নিশ্চয়ই অনেক কিছু শিখেছেন…
আসলে শিক্ষা নেওয়ার জন্য তো ঘুরতে যাই না। কোথাও গেলে কী কী শিখব, এমনটা নির্দিষ্ট করে ভাবাও হয় না। তবে হ্যাঁ, জীবনের দর্শনগত দিক থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এটা খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশে আমরা অনেকে সুবিধাসম্পন্ন জীবন যাপন করি। বিদেশে গেলে প্রবাসীদের জীবনের গল্প জানা যায়। কত কষ্ট করে তাঁরা প্রবাসে থাকেন, শুধু নিজের পরিবারকে একটু ভালো রাখার জন্য। এসব জানলে দেখলে নিজের জীবন নিয়েও নানা উপলব্ধি আসে।
নতুন আর কী করছেন?
কয়েকটা নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র করেছি। নাম, নির্মাতা, সহশিল্পী এসব মুক্তির সময় জানাব।