মেহজাবীন চৌধুরী
দেশের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী তিনি। নাটকে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখে এবার পা রেখেছেন সিনেমাতে। আর নিজের প্রথম সিনো ‘সাবা’ নিয়ে ঘুরে এসেছেন আন্তর্জাতিক মহলে। কুড়িয়েছেন ব্যাপ প্রশংসা।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী ভক্তকুল তার। বলছিলাম লাবণ্যময় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর কথা। অভিনয় আর দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি অভিনেত্রীর ভক্তকুলও চোখে পড়ার মতো। আর সেই ভক্তকুলের জন্যই সাফল্যের আরেক মুকুট উঠল অভিনেত্রীর মাথায়।
ফেসবুক থেকে হঠাৎ আনন্দের এক খবর পেলেন মেহজাবীন চৌধুরী। পৃথিবীসেরা তারকাদের কাতারে এলেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী। আর এই পুরো কৃতিত্ব তাঁর ভক্তদের। মেহজাবীনের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলছেন কামরুল ইসলাম।
ফেসবুকে সক্রিয় ভক্তকুলের তালিকায় আপনার ভক্তরা সেরা ২৫-এ (২৪তম) জায়গা করে নিয়েছে। ডোয়াইন জনসন, হিউ জ্যাকম্যান, প্রিয়াঙ্কা চোপড়াদের সঙ্গে নিজের নাম দেখে কেমন লেগেছে?
এটা অনেক বড় পাওয়া। এ রকম যে হতে পারে, সেটা জানাই ছিল না। ফেসবুক থেকে যখন নোটিফিকেশন পাই, ফ্যানবেজ তালিকার সেরা ২৫-এ আমার ফ্যানবেজ, খুবই ভালো লেগেছে। এই তালিকার অন্যান্য নাম দেখে আরো অবিশ্বাস্য অনুভূত হয়েছে।
এত বড় বড় তারকার নাম সেখানে! ভক্তদের কারণে এ তালিকায় আমার নামও যুক্ত হলো, এটা অবশ্যই বিশাল ব্যাপার। এখানে আমার কোনো ভূমিকা নেই। এটা ভক্তদের অর্জন।
যারা আপনাকে এভাবে চর্চায় রেখেছে, ভালোবাসায় আগলে রেখেছে, সেই ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?
তাদের উদ্দেশে কিছু বলা খুব ডিফিকাল্ট। তাদের ভালো লাগা, ভালোবাসা একেবারে নিঃস্বার্থ। সেটার বিপরীতে ধন্যবাদ বললে বরং ছোট করা হবে। আমি তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। ভক্তদের ভালোবাসায় ক্যারিয়ারে এত দূর আসা। শুরুটাও যদি মনে করি লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারে আমি মুকুটটা পেয়েছিলাম দর্শকের ভোটে। সেখান থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আলোচনা-সমালোচনা করেছে, আমার কী করা উচিত, কেমন কাজে দেখতে চায়—এসব নিয়ে তারা বেশ সক্রিয়। সাধারণত যখন নতুন কাজ আসে, তখন শিল্পীকে নিয়ে মাতামাতি হয়। কিন্তু এখন কাজ অনেক কম করি। এমন সময়েও আমার ভক্তরা ভীষণ সক্রিয়।

টরন্টো ও বুসান ঘুরে এলেন। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?
খুব ভালো। তাদের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। যেহেতু আমাদের ছবি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কমই যায়। মনে হয়েছিল, আমাদের কতটুকুই বা গুরুত্ব দেবে! কিন্তু উৎসবগুলোতে যাওয়ার পর সেই ধারণা বদলে গেছে। প্রতিটি দেশ থেকে আসা ছবিকে সমান গুরুত্ব দিয়েছে তারা। ছবির প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন, ভালো-মন্দ নিয়ে আলোচনা—সব কিছুতে তারা মনোযোগী। আমার জন্য এসব তো নতুন অভিজ্ঞতা। প্রথম ছবি, সেটা নিয়ে এ রকম আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নেওয়া, আশপাশে এত বড় বড় তারকা, তাঁদের ছবি দেখা। সেখানে একমাত্র বাংলাদেশি ছবি নিয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছি, এটা বেশ ভালো লাগার।
টরন্টোতে ‘সাবা’র প্রদর্শনী হাউসফুল ছিল। বুসানে কেমন দেখলেন?
আনফরচুনেটলি বুসানে মাত্র দুজন বাংলাদেশি দর্শক পেয়েছি, অন্য সবাই ভিনদেশি। দুটি শোতে উপস্থিত ছিলাম, দুটিই হাউসফুল। হয়তো ফেসবুকে সেভাবে প্রচারণা করিনি বলে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিরা জানতে পারেনি। তা ছাড়া একটু তাড়াহুড়ার মধ্যেই আসলে বুসান গিয়েছিলাম। দর্শক ছবিটি বাংলা ভাষায়ই দেখেছে সাবটাইটেল দিয়ে। এ কারণে চিন্তা ছিল, ছবিতে আমরা যা বলছি, ট্রান্সলেশনের মাধ্যমে তা ঠিকঠাক বুঝতে পারে কি না। তবে দারুণ ব্যাপার হলো, টরন্টো ও বুসান দুই উৎসবেই দর্শকের এনগেজমেন্ট টের পেয়েছি। হাসির মুহূর্তে দর্শক হেসেছে, দুঃখের দৃশ্যে সেই প্রতিক্রিয়াও দেখেছি। এখান থেকে উপলব্ধি করলাম, চলচ্চিত্রের কোনো ভাষাগত সীমাবদ্ধতা নেই। আর্ট ডাজন’ট হ্যাভ এনি ল্যাঙ্গুয়েজ।
প্রথম ছবির প্রিমিয়ার ছাড়া দুই উৎসবের আর কোন দিকটা মনে গেঁথে থাকবে?
এখন আমরা সবাই অনেক বেশি অস্থির। কোনো কনটেন্টের দৈর্ঘ্য যদি একটু বেশি হয়, অস্থিরতার কারণে বলে ফেলি, আরো ছোট করে বানাতে পারত। এ জিনিসটা টরন্টো বা বুসানে দেখিনি। ‘সাবা’র বাইরে আমি কিছু ছবি দেখেছি, যেগুলো বেশ ধীরগতির। কিন্তু এ নিয়ে দর্শকের মধ্যে কোনো অস্থিরতা নেই। আমি দর্শকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলে, ‘কারো শিল্পকে সময়ের দৈর্ঘ্য দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।’ অর্থাৎ আমি যদি একটি ছবি দেখতে যাই, তাহলে দেখার সময় কোনো অস্থিরতা ছাড়াই বোঝার চেষ্টা করব, এটা একটা কমিটমেন্টের মতো। হয়তো গল্পটা এখন যেভাবে বুঝতে পারছি, ছোট হলে সেভাবে পারতাম না। তো বিদেশিদের মধ্যে শিল্পের প্রতি কমিটমেন্ট অনেক দৃঢ়। কোনো ছবিকে আগেই বিচার করে ফেলা, স্লো-বোরিং এসব বলে ফেলার অভ্যাস তাদের নেই।
শঙ্খ দাশগুপ্তের ‘প্রিয় মালতী’র খবর কী?
এটার মুক্তির ঘোষণা খুব জলদিই আসবে। বারণ থাকায় আমি তথ্যটা দিতে পারছি না, অফিশিয়ালি টিম থেকে শিগগিরই জানানো হবে।
আপনার বোন মালাইকা সম্প্রতি অভিনয়ে এসেছেন। অভিজ্ঞ হিসেবে তাঁকে কী পরামর্শ দিলেন?
অনেক দিন ধরেই নির্মাতারা ওকে কাজে নিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বয়স কম, পড়ালেখার ব্যস্ততা থাকায় আমরা বারণ করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগমুহূর্তে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র করেছে। এর পর থেকে অনেক নাটকের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। তো মাস দুয়েক আগে একদিন রাজ ভাইয়ের [মোস্তফা কামাল রাজ] সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল। কথায় কথায় আমি একটা গল্পভাবনা জানাই। সেটা শুনে তিনি মালাইকাকে নিতে চান। পরে ওর ভার্সিটির ছুটিতে শিডিউল করে কাজটি করা হয়। দুশ্চিন্তায় ছিলাম, ও পারবে কি না। মালাইকা নিজেও নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞাপনে সংলাপ দিতে হয়নি, নাটকে তো সংলাপ আছে। তবে রাজ ভাই ওকে সাহস-পরামর্শ দিয়েছেন। আর আমি বলেছি, নির্মাতার কথা মন দিয়ে শোনো, মনে মনে দৃশ্যগুলো অনুভব করো, তাহলে সংলাপ বলা সহজ হবে। ছোট মানুষ তো, পরামর্শ দিলেও সেটা যে খুব বেশি কাজে লাগবে, তা-ও নয়। কারণ প্রত্যেক শিল্পীর প্রথম কাজ প্রথমের মতোই হয়। সেখানে অনেক ভালো অভিনয় আশা করা যায় না। সবার শুরুটা তো এভাবেই হয়।
নতুন কী করছেন?
দেশের পরিস্থিতি তো জানেন। কিছু কাজের কথা হয়ে আছে। কিন্তু লোকেশন ও নিরাপত্তাজনিত কিছু কারণে শুটিং শুরু হচ্ছে না। যেহেতু বড় বাজেটের কাজ, তাই সবাই আরেকটু সময় নিচ্ছে, প্রস্তুতিটা আরো গুছিয়ে নিচ্ছে। এই আর কি।