যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে পুতিনকে ফোন করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপ হয়। ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এটা তাদের প্রথম ফোনালাপ। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাম না প্রকাশের শর্তে এই ফোন কলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কয়েকটি সূত্র।
ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানায়, ট্রাম্প রাশিয়ান প্রেসিডেন্টকে ইউক্রেনে যুদ্ধ না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ইউরোপে মার্কিন সমরিক বাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতির বিষয়টিও মনে করিয়ে দেন। তবে সেনা উপস্থিতির বিষয়টিকে ট্রাম্প হুমকির আকারে উপস্থাপন করেছেন কি না, সেটা প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, দুজন ব্যক্তি ইউরোপীয় মহাদেশে শান্তির লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ট্রাম্প শিগগিরই ইউক্রেনের ‘যুদ্ধের সমাধান’ নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আবার আলোচনা করবেন।
ট্রাম্প অবশ্য তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছিলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের অবিলম্বে সমাপ্তি ঘটাবেন। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তিনি এ সমস্যার সমাধান করবেন, সে সম্পর্কে কিছু জানাননি। ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি এমন একটি চুক্তিকে সমর্থন করবেন, যেখানে রাশিয়া কিছু দখলকৃত অঞ্চল রাখবে।
দুইজনের মধ্যে ফোনালাপের সময় এসব অঞ্চল নিয়েও কথা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
এর আগে ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার এনবিসিকে বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ নির্বাচনের পর থেকে প্রায় ৭০ জন বিশ্বনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন, যেখানে ইলন মাস্কও যোগ দিয়েছিলেন।
পুতিন ও ট্রাম্পের ফোনালাপের কথা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে এ বিষয় নিয়ে তারা কোনো আপত্তি করেননি, বিষয়টির সম্পর্কে জানেন এমন পরিচিত দুইজন ব্যক্তি এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই বুঝতে পেরেছিলেন, ট্রাম্প যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানে পুতিনের সঙ্গেই জড়াবেন।
এদিকে এএফপি জানিয়েছে, বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলেনস্কি। বহুল আলোচিত এই ফোন কলে ট্রাম্পের অন্যতম সহযোগী ধনকুবের ইলন মাস্কও যোগ দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ট্রাম্পের ফিরে আসার সংবাদে রুশ সরকার সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রবিবার বলেন, ‘(ট্রাম্পের জয়ের পর) ইতিবাচক হাওয়া বইছে। অন্তত তিনি সংঘাত নয়, শান্তি নিয়ে কথা বলছেন।’ ট্রাম্প ও তার মিত্ররা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা বন্ধের উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র শনিবার ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায়, ট্রাম্প ও জেলেনস্কি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। ছবির ক্যাপশনে বলা হয় : ‘পিওভি (পয়েন্ট অব ভিউ) : ৩৮ দিন পর আপনি আপনার নিয়মিত চাঁদার উৎস হারাতে চলেছেন।’
২০২২ এ রাশিয়া ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ওয়াশিংটন দেশটিকে শত শত কোটি ডলারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে। ট্রাম্প বারবার এসব তহবিল দেওয়ার সমালোচনা করেছেন এবং অন্য রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদেরও বিরোধিতা করেছেন। গত বছর ট্রাম্প দাবি করেছেন, ওই সময় তিনি হোয়াইট হাউজে থাকলে পুতিন কখনোই ইউক্রেইনে আক্রমণ চালাতেন না।
এদিকে ট্রাম্পের যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক স্টিভেন চিউং এই ফোনকলের বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। এএফপিকে এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্যান্য বৈশ্বিক নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত ফোন কল নিয়ে কোনো মন্তব্য করি না।’
ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান নিয়ে ভবিষ্যতে আরো আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। এর আগে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে পুতিন বলেন, ইউক্রেনের সংকট নিরসনে আলোচনা করতে মস্কো প্রস্তুত। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এবং ইউক্রেন সংকট সমাধানে সহায়তা করতে ট্রাম্প যে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তা নিয়ে তিনিও আগ্রহী।
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, এএফপি