সাফের শিরোপা জয় বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য যথেষ্ট হবে বলে ধরে নেওয়া হলেও আসলে তা নয়। নারী ফুটবল দলের সিনিয়র কয়েকজন খেলোয়াড় ও কোচ পিটার বাটলারের মধ্যে আসরের আগে থেকে শুরু হওয়া বাহাস এখনো মেটেনি। নেপালের কাঠমাণ্ডু থেকে বাংলাদেশ দল শিরোপায় রঙিন হয়ে এলেও কোচ-খেলোয়াড়দের মধ্যে শান্তির সাদা পতাকা তো ওড়েইনি; বরং তাঁদের তিক্ততা নতুন মোড়ও খুঁজে নিয়েছে। সবশেষ খবর, সিনিয়র খেলোয়াড়রা আর বাটলারকে কোচ হিসেবে চান না।
এই ব্রিটিশ কোচকে যাতে দায়িত্বে ফিরিয়ে না আনা হয়, মেয়েদের পক্ষ থেকে সেটিই এখন নতুন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। ফুটবল ভবনের দেয়াল ভেদ করে যে খবর চলে এসেছে বাইরেও।
যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ভাষ্য নেই। মেয়েরাও কোনো কথা প্রকাশ্যে বলতে রাজি নন।
টানা দুটি সাফ জেতা এক ফুটবলার এ নিয়ে প্রশ্ন শুনেই বলে দিলেন, ‘এটি নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’ কিন্তু গত সপ্তাহে বাফুফের নারী ফুটবল উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, বাটলারকেই মেয়েদের দায়িত্বে বহাল রাখতে চান তাঁরা। এরপর বাটলারের সঙ্গে সভাপতি তাবিথের ইতিবাচক আলোচনাও হয়েছে। তবে একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া মনিকা চাকমার বক্তব্যকে ঘিরেও কোচ-খেলোয়াড়ের দ্বন্দ্ব আরেক দফা দলকে বিভক্ত করেছে।
যা নিয়ে কম নাটকীয়তাও হয়নি! কোচের প্রশংসা করে এই মিডফিল্ডার বলেছিলেন, ‘পিটার বাটলার দারুণ কোচ।’ কিন্তু পরবর্তী সময়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে জানান, এমন বক্তব্য তিনি দেননি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকাশ্যে কোচকে নিয়ে করা এমন প্রশংসা দলের সিনিয়র কয়েকজন খেলোয়াড় পছন্দ করেননি। যে কারণে এক প্রকার চাপে পড়েই মনিকা ফেসবুকে পোস্ট করতে বাধ্য হয়েছেন এবং নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। এই ঘটনায়ও স্পষ্ট যে সিনিয়র খেলোয়াড়দের পছন্দের তালিকায় বাটলার নেই।
খেলোয়াড়-কোচের এই রেষারেষির শুরু সাফের আগে প্রস্তুতি ক্যাম্পে। বসুন্ধরা কিংসের মাঠে অনুশীলনের সময় সাবিনা খাতুন-মাসুরা পারভিনদের সঙ্গে বাটলারের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল, যার শীতলতা আরো বাড়ে কাঠমাণ্ডুতে গিয়ে। ড্র করা পাকিস্তান ম্যাচে সিনিয়র দুই খেলোয়াড় মারিয়া মান্দা ও মাসুরাকে বেঞ্চে রাখেন বাটলার। পরের দিনই কোচের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সিনিয়রদের পছন্দ করেন না তিনি। বাটলারও চুপ করে থাকেননি। মেয়েরা ফেসবুক-টিকটকে আসক্ত হওয়ায় মাঠের খেলায় পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। একই সঙ্গে কয়েকজনের দলীয় শৃঙ্খলা না মানার বিষয়টিও সামনে আনেন। এরপর বাটলার বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেছিলেন, বাইরের হস্তক্ষেপে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না তিনি। যদিও বাইরের সব বিতর্ক এক পাশে রেখে বাটলারের কৌশল মানিয়ে নিয়ে মেয়েরা শিরোপা ধরে রাখেন। বাটলারের অধীনে মেয়েদের উন্নতিও দৃশ্যমান। ৯০ মিনিট ধরে একই ছন্দে খেলে যাওয়া, নিখুঁত পাসের সংখ্যা এবং ফিনিশিংয়েও দক্ষতা বেড়ে যাওয়াটা সে কথাই বলছে। কিন্তু চূড়ান্ত সাফল্যও কোচ-খেলোয়াড়ের সম্পর্কে উষ্ণতা ছড়াতে পারছে না। এসব নিয়ে বাটলার নিজেও কোনো মন্তব্য করতে চাননি। আপাতত তাকিয়ে আছেন বাফুফের সিদ্ধান্তের দিকেই, ‘আমার যা কাজ, তা করে দিয়েছি। দলকে চ্যাম্পিয়ন করে ফিরেছি। কোনো কিছু নিয়ে আমার অভিযোগ নেই। বাফুফের সঙ্গে আমার কথা চলছে।’ বাটলারের বর্তমান চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। মেয়াদ বাড়িয়ে মেয়েদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবেন কি না, সেটিই এখন দেখার।