ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন, সংক্ষেপে ইন্টারপোল, যেটি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অপরাধ-সংক্রান্ত সহযোগী সংস্থা হিসেবে পরিচিত। পুলিশ না হয়েও ইন্টারপোল অপরাধীদের আটক এবং ধরার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। তাদের ‘ওয়ান্টেড’ লিস্টে নাম উঠলে অপরাধীদের পক্ষে পালানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের ১৯৫টি দেশে তাদের কার্যক্রম ছড়িয়ে আছে।
ইন্টারপোলের প্রধান কাজ হলো আন্তর্জাতিক পুলিশ বাহিনীগুলোকে সহায়তা করা। সহজ করে বললে, কোনো দেশের নাগরিক অপরাধ করে অন্য দেশে পালিয়ে গেলে ইন্টারপোলের সাহায্যে তাকে ফেরানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়। অর্থাৎ, অপরাধ করে দেশ ছাড়লেও রেহাই মেলে না, কারণ আছে ইন্টারপোল।
অতীতে বড় ধরনের অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া ছিল সহজ।
অপরাধীরা দেশের সীমানা পেরোলেই তাদের আটক করার সুযোগ সীমিত হয়ে যেত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন মাফিয়া চক্র সহজেই পালাত। বৈশ্বিকভাবে এই সমস্যা মোকাবেলার উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন বা ইন্টারপোল। ১৯১৪ সালে মোনাকোতে ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ জুডিশিয়াল পুলিশের প্রথম বৈঠকে এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা সম্মত হন যে, আন্তর্জাতিক অপরাধীদের দমন করতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে। ১৯২৩ সালে ১৯টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ কমিশন নামে এই সংস্থা গঠিত হয়। ১৯৪৬ সালে এর নাম পরিবর্তিত হয়ে ইন্টারপোল হয়, যা জাতিসংঘের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। সংস্থাটির সদর দপ্তর ফ্রান্সের লিয়নে অবস্থিত। এটি বিশ্বজুড়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তদন্তমূলক সহায়তা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
কীভাবে কাজ করে ইন্টারপোল?
ইন্টারপোল সারা বিশ্বের পুলিশ এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। যদিও এটি কোনো পুলিশি সংস্থা নয়, তবে এর প্রধান কাজ অপরাধীদের ধরতে এবং বিভিন্ন তদন্তে পুলিশকে সহায়তা করা। কোনো অপরাধী যখন নিজ দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেয়, তখন তাকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা প্রয়োজন হয়। এই প্ল্যাটফর্মে মাফিয়া, খুনি, যুদ্ধাপরাধী কিংবা পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ। তদন্ত থেকে শুরু করে ফরেনসিক ডেটা বিশ্লেষণ পর্যন্ত ইন্টারপোল বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করে। সংস্থাটি জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধ, মাদক চোরাচালান, মানবপাচার, শিশু পর্নোগ্রাফি, দুর্নীতি এবং এ ধরনের আরও ১৭টি অপরাধ তদন্তে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করে।
রেড নোটিশ কী?
কোনো দেশ থেকে সন্দেহভাজন অপরাধীর তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশটি ইন্টারপোলে আবেদন করে রেড নোটিশ জারি করতে। রেড নোটিশ ইন্টারপোলের আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সমতুল্য। রেড নোটিশ জারি করা হলে মুহূর্তের মধ্যে ১৯০ সদস্য রাষ্ট্রের পুলিশের কাছে সেই অপরাধীর সর্বশেষ অবস্থান ও অন্যান্য তথ্য পৌঁছে যায়। এটি প্রত্যর্পণ বা আটক করার জন্য অপরাধীকে শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারে সহায়তা করে। তবে ইন্টারপোল ‘রাজনৈতিক, সামরিক, ধর্মীয় এবং জাতিগত’ বিষয় নিয়ে কাজ করে না।
বাংলাদেশে ইন্টারপোলের কার্যক্রম
বাংলাদেশ ১৯৭৬ সালে ইন্টারপোলের সদস্যপদ লাভ করে। বিদেশে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের তথ্য ইন্টারপোলে পাঠানো এবং তার তদারকির দায়িত্ব ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)-র। ইন্টারপোলের হালনাগাদ তালিকায় দেখা যায়, ১৯৫টি দেশের মোট ৬,৬৬৯ জনের নাম রেড নোটিশে রয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আছেন ৬৪ জন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ আরাভ খানকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। যদিও এ বিষয়ে ইন্টারপোলের কার্যকারিতা নিয়ে অনেকের মধ্যে সন্দেহ আছে, তবু বাংলাদেশে রেড নোটিশ জারির পর ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৫ জনকে দেশে ফেরানো সম্ভব হয়েছে।