বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেসের (ইসকন) সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার ও জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার এবং জামিন আবেদন নাকচ করায় ভারত উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার পর এ ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং দেবতার অবমাননা ও মন্দিরে চুরি-ভাঙচুরের একাধিক নথিভুক্ত ঘটনা রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আমরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার বিষয়টিও উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, যখন এই ঘটনার অপরাধীরা অধরা রয়ে গেছে, তখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে ন্যায্য দাবি উপস্থাপনকারী একজন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টিও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি।
আমরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে হিন্দু ও সব সংখ্যালঘুর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানাই। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালও তার এক্স হ্যান্ডেলে বিবৃতিটি প্রকাশ করেছেন।
সীমান্ত অবরোধের হুমকি বিজেপি নেতার : চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মুক্তি না দিলে বাংলাদেশ সীমান্ত সনাতনীরা অবরোধ করবে বলে হুমকি দিয়েছেন বিজেপি নেতা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সোমবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাড়িতে তৃণমূলের জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক একাধিক রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতার দল। এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সেই প্রশ্ন এড়িয়ে বলেন, মমতা ব্যানার্জির ফ্যামিলিতে আজ কি মিটিং সিটিং ইটিং হয়েছে সে বিষয়ে আমরা চিন্তিত নই, ভাবিত নই।
বাংলাদেশের হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার যে লড়াই চলছে, তার প্রধান মুখ চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে ড. ইউনূসের সরকার একটু আগে গ্রেফতার করেছে, আমরা সবাই সে বিষয় নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, আমরা চিন্ময়ের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি। তাকে মুক্তি না দিলে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে বিক্ষোভ হবে এবং বাংলাদেশ সীমান্তে সনাতনীরা ধ্বজ নিয়ে অবরোধ করব। ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে আমরা কোনো পরিষেবা নিতে দেব না।
এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকালে বেহালায় একটি মশাল মিছিলেরও ডাক দেওয়া হয়েছিল। এ মিছিলে ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
ভারতকে আলোচনার অনুরোধ ইসকনের : এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেফতারের বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইসকন। মঙ্গলবার বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, ইসকন সোমবার তাদের অফিশিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে এ নিয়ে একটি পোস্ট করেছে।
ওই পোস্টে ইসকন বলেছে, ‘সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ইসকনের যুক্ত থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং অত্যন্ত আপত্তিজনক।’ ইসকন আরও বলেছে, ‘ইসকন ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছে যেন তারা অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে যে আমরা একটি শান্তিপ্রিয় ভক্তি আন্দোলন।’
তারা ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে।