সংস্কারের কেন্দ্রে রাখতে হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অবশ্যই স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে। একই সঙ্গে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবিমা চালু করা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি মাধ্যমিক ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি হাসপাতালগুলোকে আর্থিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া প্রয়োজন যাতে তারা জনবল ও বেতন-ভাতাসহ সব বিষয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে। 

নিজস্ব তহবিল থেকে চিকিৎসা খরচ জোগানো সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি কমিয়ে আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য এনজিও, বেসরকারি সংস্থা এবং সামাজিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে একই ছাতার নিচে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন। সর্বোপরি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।

স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের পদক্ষেপ নির্ধারণ এবং মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার উদ্দেশ্যে ‘রিফর্ম পাথওয়েজ ফর হেলথ সেক্টর’ শীর্ষক নীতিনির্ধারণী সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। 

শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ইউএইচসি ডে-২০২৪ উপলক্ষ্যে ইউএইচসি (ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ) ফোরাম ও ব্র্যাক যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। আলোচনায় নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। 

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ইউএইচসি ফোরামের আহ্বায়ক এবং ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন এবং সমাপনী অধিবেশনে আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্স-এর অধ্যাপক ও স্বাস্থ্য সংস্কার জোটের আহ্বায়ক ড. সৈয়দ এ হামিদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. লিয়াকত আলী, ডা. নায়লা জেড খান এবং ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে এনজিও এবং বেসরকারি সংস্থার মূল্যবান অবদানগুলোর স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে হবে। যাতে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারি। একে অপরকে দোষারোপ না করে সমন্বিত পদক্ষেপে মনোনিবেশ করা জরুরি।

চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী বলেন, দারিদ্র্য কমানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জলবায়ু সহনশীলতার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাত ভ‚মিকা রাখতে পারে। পরিবর্তনের এই সময়ে আমাদের আরও সাহসী সংস্কারের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বা ‘বড় চিন্তা’ করতে হবে। 

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যসেবাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রাধিকারমূলক খাত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সেবা গ্রহণে প্রবেশাধিকার, সেবাপ্রদানের গুণগত মান, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং রোগ প্রতিরোধমূলক প্রচার ও প্রসার। রোগীকেন্দ্রিক মানসম্মত সেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন, মানবসম্পদ ও সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। 

অধ্যাপক ড. সৈয়দ এ. হামিদ বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে ভর্তুকি ছাড়াও প্রিমিয়াম সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। 

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম বলেন, একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য সামাজিক অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বাংলাদেশে এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।

LEAVE A REPLY