১০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন বাড়ল মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

সংগৃহীত ছবি

দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ও তাৎক্ষণিক আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং। শুধু অর্থ পাঠানোই নয়, অনেক নতুন সেবাও মিলছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বাড়ল ১০ হাজার কোটি টাকা

বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা বিতরণ ও বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স) বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ মাধ্যমটি।

গত অক্টোবরে একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুনে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল, যা ছিল একক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন বেড়েছে।

এই মাসে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। একক মাসের হিসাবে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। আগের মাস সেপ্টেম্বরে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৯ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা।

আগস্টে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এক লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংক প্রথম এই সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট।

এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরো অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের নগদও দিচ্ছে এই সেবা।

এখন মোবাইল ব্যাংকিং শুধু টাকা পাঠানোর মাধ্যম না। এর ব্যবহার হচ্ছে সব ধরনের লেনদেনে। বিশেষ করে পরিষেবা বিল পরিশোধ, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা, টিকিট ক্রয়, বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ ও অনুদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মোবাইলে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন হয় এক লাখ ৩০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এপ্রিল ও মে মাসে লেনদেন হয় যথাক্রমে এক লাখ ৪৪ হাজার ৯২৯ কোটি ও এক লাখ ৪০ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা; নভেম্বরে হয়েছিল এক লাখ ১৯ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। তার আগের মাস অক্টোবরে এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয় এক লাখ আট হাজার ৩৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগস্টে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ চার মাসেই (মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন) মোবাইলে লাখো কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে তা কমে ৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায় নেমে আসে। এর পর থেকে প্রতি মাসেই লাখো কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইলে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস চালুর পর থেকে এর গ্রাহকসংখ্যা বেড়েই চলেছে, যা কোনো মাসেই কমতে দেখা যায়নি।

একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস সেবায় হিসাব খুলতে পারেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। চলতি বছরের অক্টোবরে সেই গ্রাহক সাড়ে তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৫৭ লাখ চার হাজার ৭১৩তে। আগের মাস সেপ্টেম্বরে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫২৩।

LEAVE A REPLY