পরিচালক বেকার চার শতাধিক

গৃহীত ছবি

প্রযুক্তির বহুমাত্রিক উদ্ভাবনের কারণে বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। চিত্রনাট্যের ধরণ, কাহিনির বিন্যাস, ক্যামেরার নিখুঁত ব্যবহার, সম্পাদনার শৈলী এবং দর্শকের রুচি—সবকিছুতেই লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তবে এই সাম্প্রতিকতম নির্মাণ কৌশল রপ্ত করতে না পারায় অনেক পরিচালক বেকার হয়ে পড়ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির স্থায়ী সদস্যের সংখ্যা ৩৯৫।

আর অস্থায়ী সদস্য ১৫০ জন। সব মিলিয়ে দেশে তালিকাভুক্ত পরিচালকের সংখ্যা ৫৪৫। এর মধ্যে উল্লিখিত কারণে চার শতাধিক পরিচালক বর্তমানে বেকার।

১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি।বর্তমানে সংগঠনটির আজীবন সদস্য রয়েছেন ১৯ জন। আর খ্যাতিমান সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, কাজী হায়াৎ, মনতাজুর রহমান আকবর, শাহ আলম কিরন, মতিন রহমান, বাদল খন্দকার, শওকত জামিল, ছটকু আহমেদ, এফ আই মানিক, হাফিজ উদ্দিন, শাহাদত হোসেন লিটন, বদিউল আলম খোকন, মোহাম্মদ হোসেন, উত্তম আকাশের মতো পরিচালক। একদা রুপালি জগেক মাতিয়ে রাখা নামকরা এসব পরিচালক বর্তমানে বেকার।    

তাঁরা বলছেন, চলচ্চিত্রের এই পরিণতির পেছনে রয়েছে প্রযুক্তির রূপান্তরের সঙ্গে এই পরিচালকদের নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে না পারা।

এ ছাড়া পেশাদার প্রযোজক না থাকা, পছন্দের নায়ক-নায়িকার শিডিউল না পাওয়া, সর্বোপরি তাঁদের নির্মিত সিনেমার দর্শক কমে যাওয়া। বিশ্বমানের সংগীত পরিচালক, নৃত্য পরিচালক, ফাইট ডিরেক্টর ও ক্যামেরাম্যানের সংকটও রয়েছে। ফলে বর্তমানে তাঁরা এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশ স্বাধীনের আগের বছর ১৯৭০ সালে মুক্তি পেয়েছিল ৪২টি ছবি, সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২০০৫ সালে ছবি মুক্তির এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০। অথচ ১৮ বছর পর ২০২৩ সালে মুক্তি পায় মাত্র ২২টি ছবি।

পরিসংখ্যানের এই তারতম্য থেকেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একটি চিত্র পাওয়া যায়। 

পরিসংখ্যান যা বলছে : বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ছবি মুক্তি পেয়েছে ২২টি, ২০২২ সালে ১৬টি, ২০২১ সালে ১৩টি, ২০২০ সালে ১৪টি, ২০১৯ সালে ১১টি, ২০১৮ সালে ২৫টি, ২০১৭ সালে ২৩টি, ২০১৬ সালে ৩২টি, ২০১৫ সালে ৩৩টি, ২০১৪ সালে ৩৯টি, ২০১৩ সালে ২৩টি, ২০১২ সালে ৪০টি, ২০১১ সালে ৪৫টি, ২০১০ সালে ৫৩টি, ২০০৯ সালে ৬৩টি, ২০০৮ সালে ৬৪টি, ২০০৭ সালে ৯৬টি, ২০০৬ সালে ৯৬টি, ২০০৫ সালে ১০০টি, ২০০৪ সালে ৮৮টি, ২০০৩ সালে ৭৯টি, ২০০২ সালে ৮২টি, ২০০১ সালে ৭২টি এবং ২০০০ সালে মুক্তি পায় ৮৮টি চলচ্চিত্র। ১৯৫৬ সালের আগস্ট মাসে মুক্তি পায় আবদুল জব্বার খান পরিচালিত এই অঞ্চলের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। পরের তিন বছর কোনো ছবি মুক্তি না পেলেও ১৯৫৯ সালে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ১৯৭০ সালে দেশে ৪২টি ছবি মুক্তি পায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছিল সাতটি সিনেমা। ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও মুক্তি পেয়েছিল ৩০টি চলচ্চিত্র। ১৯৮০ সালে মুক্তি পায় ৪৭টি সিনেমা। ১৯৮৫ সালে মুক্তি পায় ৫৭টি, ১৯৯০ সালে মুক্তি পায় ৭০টি সিনেমা।

LEAVE A REPLY