তীব্র শীতে ভুগছে গাজা দীর্ঘ হচ্ছে শিশুমৃত্যুর সারি

গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে ইসরাইলি আগ্রাসন। এরই মধ্যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে পুরো গাজা। ধ্বংস হয়ে গেছে প্রায় শতভাগ অবকাঠামো। বাসিন্দাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বললেই চলে। অনেকেই ধ্বংস্তূপের ওপরে, কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাঁটিয়ে করছে বসবাস। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে প্রতিনিয়তই দেখা দেয় নতুন আতঙ্ক। যখন তখন ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী মহামারি। এই অবস্থায় উপত্যকাটিতে এবার নতুন আতঙ্ক হিসাবে দেখা দিয়েছে হাড় কাঁপানো শীত। যার ফলে ভুগছে গাজা, দীর্ঘ হচ্ছে শিশু মৃত্যুর সারি। মঙ্গলবার আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় শীতের তীব্রতা এতই বেশি যে ঠান্ডায় জমে গিয়ে অঞ্চলটিতে এক সপ্তাহে ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

চিকিৎসকদের মতে, গত কয়েকদিনে গাজায় শীত ও ঠান্ডায় শিশুমৃত্যু হার বেড়েছে। গত প্রায় ১৫ মাস ধরে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এসব হামলায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। তার ওপর সেখানে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। হামলার পাশাপাশি শীতেও মারা যাচ্ছে অসহায় ফিলিস্তিনিরা। মৃত শিশুর বাবা ইয়াহিয়া আল-বাত্রান রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে থাকতেন তারা। তাদের যমজ সন্তান জুমা ও আলি। গত কয়েকদিনের তীব্র শীত ও ভারী বৃষ্টিতে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।  তিনি আরও বলেছেন, ‘গত রোববার স্ত্রী নুরা জুমাকে জাগানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু সে উঠছিল না। আমি জুমাকে তুলে দেখি সে সাদা হয়ে গেছে এবং বরফের মতো ঠান্ডা, জমে গেছে। আমি আলির কথা জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি বললেন সেও উঠছে না। তখনই হাসপাতালে নেওয়া হয় তাদের।’ 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছে গেছে। সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর স্থল অভিযান ও বোমা হামলায় ৯০ শতাংশ মানুষকে অন্তত একবার বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। কিছু মানুষ বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজার তীব্র শীত বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এদিকে যুদ্ধ বন্ধের দরকষাকষিতেই দিন পার করছে ইসরাইল-হামাস। এই মাসের শুরুতে মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ইসরাইলি এবং হামাস নেতারা লড়াই বন্ধের আশা প্রকাশ করেছিলেন। তবে বছর শেষের আগে কোনো চুক্তি হওয়ার আশা আবারও ম্লান হয়ে গেছে। 

ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা গাজায় খাদ্য, পানি, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং আশ্রয়ের জিনিসপত্র বহনকারী হাজার হাজার ত্রাণ ট্রাক ঢুকতে দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, ইসরাইলি বাহিনী ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিচ্ছে। যার ফলে মানবিক সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। উত্তরের শহর বেইত লাহিয়ার বাসিন্দা ইয়াহিয়া আল-বাত্রানের পরিবার যুদ্ধের শুরুতেই তাদের বাড়ি ছেড়ে আল-মাঘাজি নামে একটি উন্মুক্ত বালিয়াড়ি এবং ঝোপঝাড়ে ঢাকা এলাকায় চলে আসে। 

ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এই এলাকাকে মানবিক এলাকা হিসাবে নির্ধারণ করেছিল। পরে আল-মাঘাজিতেও হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। তখন তারা কাছের দেইর আল-বালাহ শহরের আরেকটি  শরণার্থী শিবিরে চলে আসে। এই এলাকার চারপাশে বহু তাঁবু। কয়েক মাসের ব্যবহারে এরই মধ্যে সেগুলো ছিঁড়ে গেছে। অথবা প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিতে উড়ে গেছে বা প্লাবিত হয়েছে। পরিবারগুলো ছেঁড়া প্লাস্টিকের শিট জোড়া লাগিয়ে এবং পানি ঠেকাতে বালু স্তূপ করে সেগুলো মেরামতের চেষ্টা চালাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলি বাহিনী হামাস যোদ্ধা ও বেসামরিক লোকজনের মধ্যে কোনো বাছবিচার করে না। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় ৪৫ হাজার ৫৪১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৭ হাজার ৪৯২ শিশু। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৮ হাজার ৩৩৮ জনে পৌঁছেছে।

LEAVE A REPLY