মার্কিন পার্লামেন্টে ট্রাম্পের প্রথম ভাষণে যে বিষয়গুলো উঠে এলো

কংগ্রেসে ভাষণ দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার ছয় সপ্তাহ বাদে মার্কিন পার্লামেন্টের দুই কক্ষের সামনে ভাষণ দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দীর্ঘ ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তার বক্তৃতায় উঠে এসেছে ‘আমেরিকা ফাস্ট নীতি’। 

ক্ষমতায় আসার পর তিনি কী কী পরিবর্তন করেছেন এবং কেন করেছেন তা স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প।

বক্তৃতার শেষ লাইনে তিনি বলেছেন, আমেরিকার সোনালি দিন কেবলমাত্র শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক বছরে যা এক অন্য মাত্রায় পৌঁছাবে। 

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট নেতাদের দিকে তাকিয়ে তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘আপনারা কি চান যে আগামী বছরগুলোতেও আমেরিকা কয়েক বিলিয়ন টাকা যুদ্ধে খরচ করুক?’

প্রশ্নের উত্তরও ট্রাম্প নিজেই দিয়েছেন।

জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থ ব্যয় করা এবার বন্ধ করা হবে। অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে ইউরোপের নেতাদের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ট্রাম্প নিজে তা মনে করছেন না। 

তিনি জানিয়েছেন, ইউরোপের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আগের মতোই আছে।

পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনার টেবিলে বসতে তিনি রাজি।

এদিনের বক্তৃতায় গ্রিনল্যান্ড এবং পানামা খালের কথা আবার তুলেছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন, পানামা খাল আমেরিকা নিজের হাতে নেবে। দেশের নিরাপত্তার প্রয়োজনে গ্রিনল্যান্ডও অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

এবং তিনি তা নিয়েই ছাড়বেন। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। আলোচনা করেছেন গাজার যুদ্ধ নিয়ে।

ট্রাম্প কানাডা, চীন ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানিতে আরোপ করা শুল্ক ও এর ফলে শুরু হওয়া শুল্ক যুদ্ধের পক্ষে যুক্তি দেন। ট্রাম্প বলেন, ‘দশকের পর দশকের পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশ আমাদেরকে শোষণ করেছে।’ 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধে মার্কিন রপ্তানিকারকরা বিশেষভাবে ক্ষতির শিকার হবে, বিশেষ, রাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ খামারিরা। তবে ট্রাম্প দাবি করেন, শুল্ক আরোপে সামান্য হবে সামান্য।

মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সামনে দীর্ঘ এক বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘তার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল যুগ’। মঙ্গলবার প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটে ভাষণের সময় দিয়ে ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন ‘চার বছর বা আট বছরে বেশিরভাগ প্রশাসনের তুলনায় ৪৩ দিনে আরো বেশি কিছু অর্জন করেছে’।

তিনি আরো বলেন, ‘আর আমরা সবেমাত্র শুরু করছি।’ 

তার বক্তব্য অনেক পরিচিত ইস্যু উঠে এসেছে। যেমন, অবৈধ অভিবাসীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়নের আহবান (যাদের তিনি অপরাধী ও ধর্ষক বলে আক্রমণ করেছেন), ট্রাম্পের  শুল্কের প্রশংসা, ট্রাম্পের মতে, এই শুল্ক মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কে ভারসাম্য আনবে এবং ট্রান্সজেন্ডার ও বৈচিত্র্যমূলক উদ্যোগের ওপর আক্রমণ।

ইলন মাস্ককে পাশে নিয়ে ট্রাম্প কেন্দ্রীয় সরকারের আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। ইতোমধ্যে হাজারো কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন। বেশ কিছু সংস্থার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে এবং বিদেশে ত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগও বন্ধ রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘অনির্বাচিত আমলাদের দেশ শাসনের দিন শেষ’।

ভাষণে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্কের প্রশংসা করেন ট্রাম্প। কেন্দ্রীয় সরকারের আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ইলন মাস্কের বিতর্কিত আগ্রাসনের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, ‘তার প্রশাসন মাত্র কাজ শুরু করেছে’।

ট্রাম্পের দাবি, তার পূর্বসূরি জো বাইডেন দেশকে ‘অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের’ মধ্যে রেখে গেছেন এবং তিনি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছেন।  ট্রাম্প বাইডেনকে মার্কিন বাজারে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্যও দোষারোপ করেন।

খনিজ সম্পদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ সপ্তাহে, আমি ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং দুর্লভ ধাতু উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেব।’

ট্রাম্প বলেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘বাক স্বাধীনতা’ পুনরুদ্ধার করেছেন। তিনি আরো বলেন, তার একটি আদেশ জারির মাধ্যমে ‘পুরুষদের খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছেন’ এবং ‘এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, মানব প্রজাতির দুটি লিঙ্গ, পুরুষ এবং নারী। এই দুটি ছাড়া আর কিছু নেই।’

ট্রাম্পের বক্তব্যের পর পাল্টা বক্তব্য রাখার সুযোগ পায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। সিনেটের এলিসা স্লটকিন মধ্যবিত্ত আমেরিকানদের উদ্দেশে একটি  বক্তব্য রাখেন। 

তিনি উল্লেখ করেন, অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে ট্রাম্প ও মাস্ক ‘বেপরোয়া’ আচরণ করছেন এবং বিদেশে ‘আমেরিকান নেতৃত্বের’ বিষয়টি তারা পুরোপুরি উপেক্ষা করছেন।

ট্রাম্পের বক্তৃতার কড়া সমালোচনা করে ডেমোক্র্যাট নেত্রী সেনেটর এলিসা স্লটকিন বলেন, ট্রাম্প যে অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা বলছেন, তাতে লাভ হবে কেবলমাত্র ধনীদের। ছোট ব্যবসা ইতিমধ্যেই মার খেতে শুরু করেছে। চাষীরাও সমস্যায় পড়তে শুরু করেছেন বলে দাবি এলিসার।

এলিসার অভিযোগ, ট্রাম্প আদালত, সংবিধান কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের প্রকাশ্য বিতর্কেরও তুমুল সমালোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাট নেত্রী। তার বক্তব্য, ট্রাম্প জেলেনস্কির সঙ্গে যা করেছেন, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। রিপাবলিকানরা অবশ্য ট্রাম্পের বক্তৃতার গুণগান করেছেন। তারা জানিয়েছেন, রেকর্ড সময় ধরে ট্রাম্পের এই বক্তৃতা অ্যামেরিকাকে নতুন পথ দেখাতে সাহায্য করেছে। 

সূত্র: ডয়চে ভেলে, এএফপি, আলজাজিরা, রয়টার্স

LEAVE A REPLY