যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ তালেবান নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানির গ্রেপ্তারের জন্য ঘোষিত ১০ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার প্রত্যাহার করেছে বলে জানিয়েছে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শনিবার (২২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
শনিবার এই ঘোষণা দেওয়া হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এখনো তার ওয়েবসাইটে হাক্কানির বিরুদ্ধে পুরস্কারের তথ্য প্রদর্শন করছে। এফবিআই বলছে, হাক্কানি মার্কিন ও মিত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সীমান্তবর্তী হামলার সমন্বয় সাধন ও তাতে অংশ নিয়েছিলেন।
এই সিদ্ধান্তের মাত্র দুই দিন আগে তালেবানরা জর্জ গ্লেজম্যান নামে এক মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেয়, যিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে পর্যটনকালে অপহৃত হয়েছিলেন। এটি চলতি বছরে তালেবানদের মুক্তি দেওয়া তৃতীয় মার্কিন বন্দি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে গ্লেজম্যানের মুক্তিকে ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং কাতারের ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার’ জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তালেবানরা বলেছে, মার্কিন বন্দিদের মুক্তি তাদের বৈশ্বিক ‘স্বীকৃতি অর্জনের’ প্রচেষ্টারই অংশ।
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে তালেবান সরকার আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে রয়ে গেছে। যদিও কোনো দেশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবুও কয়েকটি দেশ কাবুলে কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
তালেবানরা এমন এক সময়ে আফগানিস্তানের দখল নেয়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নির্ধারিত প্রত্যাহার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল, যেখানে মার্কিন বাহিনী ও তাদের মিত্রদের ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়ার শর্ত ছিল। তবে সেই চুক্তিতে পশ্চিমা-সমর্থিত আফগান সরকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা পরবর্তীতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশটির পতনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সিরাজুদ্দিন হাক্কানি ছিলেন বিচ্ছিন্ন হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান, যা যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এই নেটওয়ার্ককে আফগানিস্তানের অন্যতম ভয়ঙ্কর সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আত্মঘাতী হামলার জন্য কুখ্যাত হাক্কানি নেটওয়ার্ক কাবুলে একাধিক উচ্চ-প্রোফাইল হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে ধারণা করা হয়। এই গোষ্ঠী আফগান কর্মকর্তাদের হত্যার পাশাপাশি মার্কিন সেনা বো বার্গডালসহ পশ্চিমা নাগরিকদের মুক্তিপণের জন্য অপহরণের অভিযোগেও অভিযুক্ত।
২০২২ সালে কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হন। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, যেই বাড়িতে জাওয়াহিরি ছিলেন, সেটি হাক্কানির একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল।