রোমাঞ্চ, রহস্য ও মানবিক আবেগের এক অনবদ্য মিশ্রণ—’অফিসার অন ডিউটি’

সংগৃহীত ছবি

তিনজন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে একজনের গলার চেইন চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ। বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কেউ কিছু স্বীকার করছে না। এমন সময় থানায় প্রবেশ করেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি তার রুমে যাচ্ছিলেন, কিন্তু অন্য পুলিশ সদস্যদের কথোপকথন শুনে দাঁড়িয়ে যান এবং ঘটনা জানতে চান। সব শুনে তিনি তিনজন নারীর একজনকে চেইন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নারী চুরির কথা অস্বীকার করেন। এতে রাগান্বিত হয়ে তিনি নারীর চুলের মুঠি ধরে তার পেটে জোরে লাথি মারেন।

এরপরই নারীর আরেক সঙ্গী চুরির কথা স্বীকার করে চেইনটি বের করে দেন।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘অফিসার অন ডিউটি’ সিনেমার গল্প। কেরালার হরিশঙ্কর নামে একজন বদমেজাজি পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি অতীতের এক দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন। তার মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।

পুলিশ বিভাগে তার আচরণের কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং নিম্ন পদায়ন করা হয়েছিল। বহিষ্কারাদেশ শেষে কাজে ফেরার প্রথম দিনেই তার হাতে আসে এই চেইন চুরির মামলা। 

তদন্ত করতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন, এটি কোনো সাধারণ চুরির ঘটনা নয়। এর পেছনে জড়িয়ে আছে আরও গভীর রহস্য। চেইন হারানো কয়েকজন তরুণীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ফাঁস হওয়া এবং তাদের আত্মহত্যার ঘটনা গল্পকে আরও জটিল করে তোলে।

হরিশঙ্করের ব্যক্তিগত জীবনের টানাপড়েন এবং তার মেয়ের আত্মহত্যার সঙ্গে এই মামলার কি কোনো সম্পর্ক আছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গল্প একের পর এক মোড় নেয়, যা দর্শকদের শেষ পর্যন্ত আটকে রাখে।

নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জিতু আশরাফ। এটি তার প্রথম সিনেমা, তবে তার নির্মাণশৈলী এবং গল্প বলার দক্ষতা তাকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সিনেমাটি অ্যাকশন থ্রিলার হলেও এটি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। গল্পের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে সামাজিক সমস্যা, মানবিক আবেগ এবং রোমাঞ্চকর উপাদান। 

কানচাকো বোবান হরিশঙ্করের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। একজন বদমেজাজি, দুঃসহ অতীত বয়ে বেড়ানো পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় তিনি একদম প্রাণবন্ত। তার অভিনয়ে হরিশঙ্করের যন্ত্রণা, ক্রোধ এবং দায়িত্ববোধ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। প্রিয়ামনি হরিশঙ্করের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তবে তার চরিত্রটি খুবই সংক্ষিপ্ত। তবুও তিনি তার উপস্থিতি দিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। খল চরিত্রে তরুণ অভিনেতারা তাদের হিংস্রতা এবং চাউনির মাধ্যমে গল্পে প্রাণ সঞ্চার করেছেন। তাদের অভিনয়ে কিশোর গ্যাং কালচারের ছাপ স্পষ্ট।

সিনেমাটির সিনেমাটোগ্রাফি এবং সঙ্গীত গল্পের মেজাজকে আরও শক্তিশালী করেছে। কেরালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং থ্রিলের মিশ্রণ দর্শকদের জন্য এক চোখজুড়ানো অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে। গল্পের গতি এবং নির্মাণশৈলী দর্শকদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেঁধে রাখে। প্রতিটি দৃশ্য, সংলাপ এবং ঘটনা পরতে পরতে রোমাঞ্চ তৈরি করে। সিনেমাটি বিনোদনের মোড়কে একটি গভীর সামাজিক বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে।

‘অফিসার অন ডিউটি’ শুধু একটি থ্রিলার সিনেমা নয়, এটি একটি গভীর মানবিক গল্প যা সমাজের অন্ধকার দিকগুলোর প্রতি আলোকপাত করে। কানচাকো বোবানের অসাধারণ অভিনয়, জিতু আশরাফের দক্ষ পরিচালনা এবং গল্পের রোমাঞ্চকর গতি এই সিনেমাকে একটি অবশ্য-দেখা সিনেমায় পরিণত করেছে। নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি দর্শকদের জন্য এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা বয়ে আনবে।

LEAVE A REPLY