ঋতুপর্ণার ঘরে বাধা কেন

২০২২ ও ২০২৪ সালে পরপর দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। দুবারই সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন রাঙামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা। এতে নিজ জেলায় রাজকীয় সংবর্ধনা পেয়েছিলেন ঋতুপর্ণাসহ রাঙামাটির আরও ৪ নারী ফুটবলার।

২০২২ সালে প্রথমবারেই ঋতুপর্ণার জন্য বাড়ি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সরকার; কিন্তু ২০২৪ সালের সাফ জয়ের পরও তার বাস্তবায়ন নেই। এর দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি ঋতুপর্ণার জন্য ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কার্যকর পদক্ষেপ নেয় প্রশাসন; কিন্তু এতে আসে বাধা, যা নিয়ে মনে খুব ব্যথা পান ঋতুপর্ণা।

এতে আক্ষেপ করে ঋতু বলেন, এতকিছু অর্জনেও নিজ এলাকার মানুষের কাছে মূল্যায়ন নেই তার।

এ নিয়ে ২২ মার্চ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন ঋতুপর্ণা। সেখানে তার বাড়ি নির্মাণ নিয়ে বাধা তৈরির অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।

এদিকে ঋতুপর্ণার এ পোস্টটি ঘিরে রাঙামাটিসহ দেশজুড়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনার ঝড় ওঠে। ঋতুপর্ণার ঘর বাঁধা নিয়ে বাধা কেন- এমন প্রশ্নে প্রতিবাদ ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মহলে। অন্যদিকে অভিযোগটি নিয়ে ঋতুপর্ণাসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বললেও তা স্পষ্ট করতে পারেননি কেউ।

তবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে কাউখালী উপজেলা ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। এদিকে কারা কেন বাধা দিচ্ছে? তার আসল তথ্য পাওয়া যায়। মূলত এতে প্রস্তাবিত জমির মালিকানা দাবিদার কাউখালী উপজেলার স্থানীয় ঘাগড়া উপজাতীয় কাঠ ব্যবসায়ী ও জোত মালিককল্যাণ সমিতির নাম উঠে আসে।

এ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে এ সমিতির সভাপতি সুভাষ চাকমা বলেন, ঋতুপর্ণার বাড়ি নির্মাণে বাধা দেওয়ার অভিযোগটি যথাযোগ্য নয়। কিন্তু তার এ অভিযোগের পর সেটিকে ঘিরে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে অনেকে বিভিন্ন মন্তব্যে মনগড়া কথা বলছেন।

তিনি বলেন, ঋতুর দাবি ছিল তার নিজ গ্রামে তাদের স্থায়ী ঠিকানার বর্তমান বসতভিটায় বাড়ি এবং বাড়ির সঙ্গে রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া। ইতোমধ্যে সে রাস্তাটির নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু দিয়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসন থেকে ঋতুর বাড়ি নির্মাণের জন্য যে জায়গার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটি দীর্ঘদিন ধরে ঘাগড়া উপজাতীয় কাঠ ব্যবসায়ী ও জোত মালিককল্যাণ সমিতির দখলে রয়েছে। তাছাড়া এটি ঋতুদের আসল বাড়ি থেকে অনেক দূরে।

সুভাষ জানান, বিষয়টি এর আগে ঋতুকে জানানো হয়েছে। সেখানে আমাদের সমিতির দখলে ৪০ শতক জমি রয়েছে, যা বন্দোবস্ত প্রক্রিয়াধীন। তবে কাগজে ৪০ শতক লেখা হলেও পরিমাপে রয়েছে ৩২ শতক। তাছাড়া ঋতুপর্ণার বাড়ি নির্মাণের জন্য যে জায়গাটি নির্বাচন করা হয়েছিল তা প্রশাসন আমাদের কিছুই জানায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। প্রয়োজনে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ জমি ছেড়ে দেওয়ার পক্ষেও মত দেন তিনি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঋতুপর্ণা বলেন, ২০২২ সালে প্রথমবার সাফ জয়ের পর প্রশাসন থেকে আমাকে বাড়ি ও রাস্তা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তা দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন করা হয়। তদুপরি আমিও এগুলো নিয়ে কোনো তদবির করিনি। আবার ২০২৪ সালে সাফ জিতলে রাঙামাটিতে আমাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে আমি আমার সমস্যাগুলো তুলে ধরি। তখনও বিষয়টি নিয়ে আবার দৃঢ় আশ্বাস দেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

তিনি বলেন, এর একপর্যায়ে ২০ মার্চ কাউখালী ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) আমাকে ডেকে নিয়ে ঘাগড়াবাজারে বাড়ি করে দেওয়ার জায়গাটি দেখান। এ সময় জায়গাটির পরিমাপও করে দেওয়া হয়। জায়গাটি আমাকে দেওয়া হবে এবং সেখানে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও। কিন্তু পরে জানতে পারলাম সেই জায়গাটি নাকি একটি সমিতির দখলে। স্থানীয় কেউ কেউ জানালেন জায়গাটি নিলে আমি নাকি বিতর্কিত হয়ে যাব। আরও নানা ধরনের কথাবার্তা বলা হয় আমাকে। বিষয়টি আমি ইউএনও এবং এডিসিকে (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) জানিয়েছি। এরপর বলা হয়েছে, তারা বিষয়টি দেখবেন।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলার কাউখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তাই এটি নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। কয়েক দিন আগে ঋতুপর্ণাসহ আমরা জায়গাটি দেখে এসেছি। পরে জানতে পারি কেউ একজন ঋতুপর্ণাকে ফোন করে বলেছে জায়গাটি তাদের এবং একজনের কাছ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে।

তিনি বলেন, খাসজমি তো কারও দখলে নেওয়ার সুযোগ নেই। সেখানে যদি জায়গা নিয়ে কারও আপত্তি থাকে তাহলে তারা আমাদের কাছে আসতে পারেন। ঋতুপর্ণাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে আমরা বিষয়টি আমরা দেখছি।

রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমীন বলেন, ঋতুপর্ণাকে বরাদ্দ দেওয়া জায়গাতেই বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। ঋতুপর্ণার ফেসবুক পোস্টটি আমাদের নজরেও এসেছে। আমরা সরকারি জায়গা সরকারি টাকায় বরাদ্দ দিয়েছি। এখানে অন্য কারোর সুযোগ নেই কিছু করার। ঋতুপর্ণাকে যারা ফোন করে বলেছে তারা কী বুঝে বলেছে, তা বলতে পারি না। তবে বিষয়টির বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

LEAVE A REPLY