বসুন্ধরা কিংসের ফরোয়ার্ড রাকিব।
প্রশ্ন : কয়েক বছর ধরে আক্রমণভাগের গুরুদায়িত্ব আপনার কাঁধে। এটা কতটা চাপের এবং কেমন উপভোগ করছেন?
রাকিব হোসেন : চাপ তো সব সময়ই থাকে। আমি চেষ্টা করি সব সময় নিজেকে উজাড় করে দিতে। শুরুর দিকে অনেক সময় চাপ অনুভব করতাম।
সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করতাম। এখন অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি। তবে উন্নতির তো শেষ নেই। উন্নতির জন্য কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রশ্ন : নিজের ফিনিশিং কিংবা টেকনিক্যাল দিকগুলোতে উন্নতির জন্য বাড়তি কী করে থাকেন?
রাকিব হোসেন : জিমে অনেকক্ষণ থাকা হয়। এটা আমি নিয়মিত করি। জিম করলে মানসিকভাবে সতেজ থাকা যায়। খুবই কাজে দেয়।যখন ক্লাবে থাকি তখন অনুশীলনের পর ফিনিশিং নিয়ে আরো কিছু সময় কাজ করা হয়।
প্রশ্ন : হামজা চৌধুরীর সঙ্গে প্রথমবার খেললেন। এমন একজন বড় মাপের খেলোয়াড়ের সঙ্গে ড্রেসিং রুম থেকে মাঠের অভিজ্ঞতা কেমন হলো?
রাকিব হোসেন : সে (হামজা) খুব ভালো মানুষ। উঁচু মানের খেলোয়াড়। ওর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, সুন্দর মানসিকতা।
সবার সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যেতে পারে। আমাদের খুব সহজেই বুঝতে পেরেছে। আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমন না। আমাদের ভাবনার বিপরীত মানুষ সে। খুবই সাদাসিধে একজন মানুষ।
প্রশ্ন : হামজা থাকায় আপনি কতটা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পেরেছেন?
রাকিব হোসেন : সামনে থেকে রক্ষণভাগের নেতৃত্ব দিয়েছে হামজা। আমরা যারা আক্রমণভাগে খেলি, আগে আক্রমণের পাশাপাশি নিচে নেমে রক্ষণেও সাহায্য করতে হতো। এবার সেটা করতে হয়নি। খুব একটা নিচে নামতে হয়নি বলে ভারতের গোলরক্ষক, রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রাখতে পেরেছিলাম।
প্রশ্ন : হামজার অনুপ্রেরণা তো এবার যোগ হয়েছে। গত কয়েক বছরে জাতীয় দলের মধ্যে কেমন পরিবর্তন দেখছেন?
রাকিব হোসেন : একটা ব্যাপার বলতে চাই, আগে আমরা যে ধরনের ফুটবল খেলতাম, আর এখন যেভাবে খেলি—এর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আমরা এখন বিল্ড আপ ফুটবল খেলি। ভারতের সঙ্গে ম্যাচে যদি ফিরে যান তাহলে দেখতে পাবেন, আমরা বল দখলে এগিয়ে ছিলাম। আক্রমণের পর আক্রমণ করেছি। কিন্তু তিন বছর আগে যখন ভারতের সঙ্গে খেলেছিলাম তখন পাল্টা-আক্রমণ নির্ভর ছিলাম। সুযোগের অপেক্ষায় থাকতাম। এখন আর সেই ধরনের ফুটবল খেলি না। এখন আমরা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে চাই। সমমান বা একটু এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে ম্যাচ হলেই জেতার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামি আমরা। কারণ আমাদের মানসিকতা বদলে গেছে। ২৩ জনের দলে যে-ই সুযোগ পাক না কেন, সবার লক্ষ্য একটাই থাকে, আমাদের জিততে হবে।
প্রশ্ন : এই পরিবর্তনের ছোঁয়া পেলেন কিভাবে?
রাকিব হোসেন : এখানে কোচকে (হাভিয়ের কাবরেরা) কৃতিত্ব দিতে হবে। আমাদের সব সময় সাহস জুগিয়েছেন তিনি। মনোবলে যেন চিড় না ধরে সবাইকে সেভাবে উজ্জীবিত করে রাখেন। তাঁর কারণেই আমাদের মানসিকতায় বদল এসেছে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, মাঠে নামার আগে প্রতিপক্ষ দল নিয়ে দারুণ হোমওয়ার্ক করতে পারেন তিনি। বেশির ভাগ সময় তাঁর এই হোমওয়ার্কের সঙ্গে খেলায় মিল পেয়েছি। আর দলের মধ্যে সুস্থ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ আছে। নতুনরা এসে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারছে। সিনিয়ররা নানাভাবে সাহায্য করছে। এই যেমন শাকিল আহাদ তপু। দ্বিতীয়বার ক্যাম্পে এসেই ভারতের বিপক্ষে দারুণ খেলল। সবাই ওকে অভিনন্দন জানিয়েছে। কিন্তু আগে নতুন কেউ ক্যাম্পে এলে বলত, কেন ওকে ডাকল? এখন আর এ রকমটা হয় না।
প্রশ্ন : মানসিকতার উন্নতি হলেও পুরনো আক্ষেপ মানে ভারতের বিপক্ষেও আপনারা গোল পাননি…
রাকিব হোসেন : এটা তো দৃশ্যমান ব্যাপার। আমাদের আসলে প্রথাগত ‘নাম্বার নাইন’ নিয়ে খেলতে হবে। এ ছাড়া আমরা যারা আক্রমণভাগে খেলি তাদের অনেক কাজ করতে হবে। সঙ্গে ভাগ্যের ব্যাপারও আছে। অনেক সময় ভাগ্য সহায় থাকে না।
প্রশ্ন : অনেক সুযোগ নষ্ট করে ভারতের সঙ্গে ড্র করলেন। আগামী জুনে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলা। কেমন প্রত্যাশা রাখছেন?
রাকিব হোসেন : এই ম্যাচ আরো কঠিন হবে। কারণ হামজাকে নিয়ে আমরা কিভাবে খেলি সেটা কিছুটা হলেও সিঙ্গাপুর আঁচ করতে পেরেছে, ভারত যেটা পারেনি। তবে আমরা জেতার জন্যই খেলব।