ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে কোথায় অসুবিধায় পড়বে ভারত

২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি : এএফপি

বাণিজ্য মাসুল নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে ২৭ শতাংশ হারে ভারতের পণ্যের ওপর মাসুল বসানোর ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। ভারতের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের রপ্তানি শুল্ক বসানোকে কিভাবে দেখছে দেশটির শিল্প-বাণিজ্য মহল?

‘চাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে’
ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ও প্রথম নারী চেয়ারপারসন নয়নতারা পাল চৌধুরীর দাবি, ভারত সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ করা উচিত। শুধু চা রপ্তানি নয়, এই শুল্কের প্রভাব সারা দেশের বাণিজ্য মহলে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

নয়নতারা ডিডব্লিউকে বলেন, ‘ভারতের বাণিজ্যের বিভিন্ন শাখায় এই নতুন শুল্কের প্রভাব পড়বে। এই মুহূর্তে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন।’

অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়বে
অর্থনীতিবিদ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক গৌতম গুপ্তর মতে, এর ফলে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের অর্থনীতি। ডিডব্লিউকে তিনি বলেছেন, ‘খুব খারাপ হলো।

অনেক বছর আগে শুল্কে ভারসাম্য রক্ষার জন্য ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড তৈরি হয়েছিল। সেটাকে এড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন এই শুল্কারোপ সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ক্ষতি করবে। অন্য দেশে আমাদের থেকে চড়া হারে শুল্ক চাপানো হলে যে তাতে ভারতের লাভ হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।’

একই মত সাংবাদিক ও ফিকির সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অঞ্জন রায়ের।ডিডব্লিউকে তিনি বলেন, ‘এ যেন অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর বাণিজ্যনীতি। সেই সময় আমদানিকে খারাপ ও রপ্তানিকে ভালো বলে মনে করার নীতি ছিল। সেই সময়ও যেহেতু স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রায় বাণিজ্য হতো, রপ্তানিতে সেই মুদ্রা দেশে আসত। ফলে সবাই রপ্তানি চাইত। পৃথিবী আর সেই যুগে আটকে নেই।

এগিয়েছে। সারা পৃথিবীর বাণিজ্য এগিয়েছে। প্রয়োজনে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের মতো সংস্থা তৈরি হয়েছে, যেন বাণিজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক বণ্টনে সমতা থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি এক মুহূর্তে সেই সমতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।’

প্রতিযোগিতায় এগোবে ভারত?
তবে অঞ্জন রায়ের মতে, ভারত তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি রপ্তানিনির্ভর নয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদার ওপর অর্থনীতির অনেকাংশ দাঁড়িয়ে আছে। তুলনায় বিপদ বেশি চীনের মতো দেশের। সেখানে শুল্কের হার যেমন বেশি, ঠিক তেমনই সেই দেশের অর্থনীতি অনেকাংশে রপ্তানিনির্ভর। ভারতের তুলনায় তাদের অনেক বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে।’

এদিকে বিশ্ববাজারে ভারত থেকে পোশাক রপ্তানি ক্রমেই বেড়েছে। পৃথিবীর ৪ শতাংশ পোশাক ও কাপড় রপ্তানি হয় ভারত থেকে।  যদিও পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন ও বাংলাদেশ। নতুন শুল্কব্যবস্থায় চীন ও বাংলাদেশের ওপর বেশি চাপের কারণে ভারত কি বেশি সুবিধা পেতে পারে?

অঞ্জনের মতে, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে এর প্রভাব পড়বে বিস্তর। বাংলাদেশের রপ্তানি থেকে আয়ের সিংহভাগ, অর্থাৎ প্রায় ৮০ শতাংশ আসে পোশাকশিল্প থেকে। অঞ্জন বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কাকেও সাংঘাতিক সমস্যায় পড়তে হতে পারে।’

চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানিতেও বিপদ বাড়বে
অন্যদিকে চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানিতে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। ২০২৩ সালে এই রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৪৭৫ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছর সেটা কমে দাঁড়ায় ৪২৮ কোটি মার্কিন ডলার। নতুন শুল্কনীতিতে এ শিল্প মার খাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তিন দশক ধরে চামড়াজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করছেন ইমরান জাকি। ডিডব্লিউকে তিনি বলেন, ‘ভারত চিরকালই চামড়াজাত শিল্পে এগিয়ে ছিল। এর কারণ মূলত এখানে সহজলভ্য শ্রমিক ও কাঁচামাল। এমনিতেই চামড়াজাত দ্রব্যের বাজার খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। চামড়ার বিকল্প তৈরি হয়ে গেছে। প্রতিযোগিতা বেড়েছে। অন্যদিকে শ্রমিকও এখন আর সুলভ নয়। শ্রমের মূল্য বেড়েছে। এই নতুন শুল্কও আমাদের সাংঘাতিক চাপের মুখে ঠেলে দেবে। ইউরোপে রপ্তানি করে আমরা মূলত ভালো দাম পাই। যুক্তরাষ্ট্রে আমরা অনেক বেশি পরিমাণে রপ্তানির সুযোগ পাই। এর ফলে আমাদের লোকসান হবেই।’

LEAVE A REPLY