আমি খারাপ অভিনয়শিল্পী নই

নিদ্রা নেহা

শুরুটা ‘মিস ইউনিভার্স—বাংলাদেশ’ দিয়ে। সেখান থেকে মডেলিংয়ে, কাজ করেন বিভিন্ন নামি ব্র্যান্ডের হয়ে। পরে মনে জাগে অভিনয়ের সাধ। বছর পাঁচেক হলো অভিনয় করছেন।

নিজেকে শাণিত করার জন্য যোগ দেন নাটকের দল ‘প্রাচ্যনাট’-এ। টিভি নাটক, ওয়েব কনটেন্ট ও চলচ্চিত্রে ইতিবাচক সাড়াও পেয়েছেন। গত বছর ‘শরতের জবা’ ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে বেশ। ওয়েব সিরিজ ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’-এও দেখিয়েছেন দক্ষতা।

তবে হঠাৎ করেই বেশ কিছু অভিযোগ সামনে আনলেন অভিনেত্রী। এমনকী ছেড়ে দিতে চলেছেন শোবিজ অঙ্গনও!

দুই সিনেমা থেকে বাদ, অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা নেহার

“নিজের প্রশংসা করতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি খারাপ অভিনয়শিল্পী নই। আমাকে যদি ভালোভাবে চরিত্র-দৃশ্য বোঝানো হয়, সেটা ঠিকঠাক উপস্থাপন করতে পারি।

 ‘হাঁসের সালুন’-এ (‘আধুনিক বাংলা হোটেল’-এর একটি পর্বের নাম) আমি অল্প সময়ের জন্য আছি, তবু কাজটা নিয়ে কথা হয়েছে। দেশের অনেক গণমাধ্যম, এমনকি ভারতের পত্রিকায়ও আমাকে নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। তার মানে আমার অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন নেই! তাহলে প্রশ্নটা কোথায়? কেন কাজ বাতিল হচ্ছে?” – আলাপের শুরুতেই মন খারাপ করে বললেন নিদ্রা নেহা। তবে কোন প্রজেক্ট থেকে বাদ পড়ে এতটা মুষড়ে পড়েছেন অভিনেত্রী, তা খোলাসা করতে চাইলেন না। নেহা মানেন, সব কাজে তিনি যোগ্য নন।

চরিত্রের ধরন অনুযায়ী তিনি মানানসই না হলে সেটা হাতছাড়া হতেই পারে। তাঁর অভিযোগ সব কিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর শুটিংয়ের দু-এক দিন আগে বাদ দেওয়া নিয়ে। এটাকে ‘অবিচার’ বলে মনে করেন অভিনেত্রী।

পরপর দুটি বড় ছবি হাতছাড়া হয়েছে নেহার। নাম উল্লেখ না করেই বলেন, ‘জানুয়ারির ঘটনা। আমি মুম্বাইতে ছিলাম, বাবার চিকিৎসার জন্য। আগে ছোট পর্দায় অনেক জনপ্রিয় ছিলেন, এখন সিনেমা করছেন, এই ঈদেও তাঁর ছবি আছে। তাঁর সঙ্গে একটা ছবি হওয়ার কথা। পরিচালকও আমাকে চাইছেন। সব কিছু চূড়ান্তই ছিল। দুই মাস ধরে প্রস্তুতিও নিলাম। হঠাৎ শুটিংয়ের আগে নিউজ, ওই ছবিতে নায়িকা অমুক! তখন মুম্বাই থেকে নির্মাতাকে ফোন করি। রেসপন্স পাইনি। পরে দেশে এসে পরিচালকের সহকারীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। দুই দিন সময় চাইল, বিষয়টা সমাধানের। এরপর ক্যানসেল করে দিল। ১০ দিন পর আবার কল করা হলো। আবার শিডিউল চাইলেন। পরিচালক নানাভাবে চেষ্টা করেছিলেন চরিত্রটির জন্য আমাকে নিতে। কিন্তু প্রযোজকের অনিচ্ছায় আমাকে নেওয়া হয়নি। কারণ কী? আমি জানি না। এই যে বারবার শিডিউল নষ্ট করা হয়, এতে আমাদের কত ক্ষতি হয়! আমাদের তো ঘর-সংসারও দেখতে হয়। টুকটাক বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক করতে হয়। ছবির শিডিউলের জন্য সেগুলো ছেড়ে দিতে হয়। এই অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ তো তাঁরা দেয় না।’

সম্প্রতি নতুন একটি ছবিতে যুক্ত হয়েছিলেন নেহা। অডিশন সেরে শুটিংয়েও অংশ নিয়েছেন। এমন অবস্থা থেকেও বাদ পড়েছেন তিনি! নেহার ভাষ্য, ‘তারা আমাকে ডেকেছিল, কথা হলো, অডিশন দিলাম, তাদের পছন্দ হলো। আমার শিডিউল নিয়ে একটু জটিলতা ছিল, তবু ম্যানেজ করে নিলাম। বাবার চিকিৎসার জন্য ২৫ মার্চ দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। টিকিট পর্যন্ত ক্যানসেল করলাম। এরপর শুটিং করলাম এক দিন। সাধারণত শুটিংয়ের আগে শিল্পীদের সঙ্গে একটা চুক্তি হয়, বিভিন্ন নির্দেশনা-শর্ত দেওয়া হয়। সেগুলো মেনে চলতে হয়। এ রকম কিছুই হলো না। কারণ ঈদের আগে তাড়াহুড়ার মধ্যে ওই এক দিনের শুটিং হয়েছিল। আমিও আর ব্যাপারটা নিয়ে কথা বাড়াইনি। এর মধ্যে এক রিপোর্টার আমাকে কল করেন, নতুন কাজের খবরাখবর জানতে চান। আমি ওই ছবির কথা বলি। যেহেতু আমাকে টিম থেকে বারণ করা হয়নি, তাই আমি নরমালি বিষয়টি জানিয়েছি। নিউজ হওয়ার পর আমার সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি! এটার অধিকার তো নেই তাদের। আমি একজন শিল্পী। আমার জায়গায় কোনো বড় তারকা থাকলে তারা এমনটা করতেন না। অনেক বোঝানোর পরেও তারা বোঝেনি। এটা নিয়ে নাকি তাদের অনেক সমস্যা হয়ে গেছে। ১১ এপ্রিল থেকে আমার দ্বিতীয় লটের শুটিং হওয়ার কথা। দুই দিন আগে ফোন করে বলা হলো, আমার চরিত্রটা তারা রাখছে না।’ 

নেহার অভিযোগের সঙ্গে রাফীর ‘তাণ্ডব’ ছবির প্রসঙ্গে মিলে যায়। যদিও অভিনেত্রী কোনো ছবির নামই উল্লেখ করতে চাননি। আক্ষেপ প্রকাশ করে নেহা বলেন, ‘বারবার এভাবে একজন শিল্পীর মন ভাঙতে পারে না তারা। এখন বিভিন্ন জায়গায় কথা হচ্ছে, অভিনয় যদি ভালো না হয়, অডিশনে না টিকলে বাদ তো দেবেই। কিন্তু আমি তো অডিশনে পাস করে শুটিংও করলাম। আমি কেন, যে শিল্পী একদম আজই ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে, তাঁর সঙ্গেও তো এটা করা উচিত নয়।’ 

এসব ঘটনায় হতাশ হয়ে অভিনয় ছাড়ার কথাও ভাবছেন নেহা। তবে আপাতত হাতের কাজগুলো সম্পন্ন করতে চান। তাঁর কারণে যেন কারো ক্ষতি না হয়, সেদিকটা নিশ্চিত করতে চান। তবে নতুন করে কোনো কাজে যুক্ত হবেন কি না, সেটা এখনো ভাবেননি।

LEAVE A REPLY