সংগৃহীত ছবি
সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি ও অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে প্রতি বছর দেশে বিপুল পরিমাণ গ্যাস অপচয় হয়। যা বছর শেষে এ খাতের সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো হয়। এই সিস্টেম লসের কারণে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক লোকসান হচ্ছে। বছরে যে পরিমাণ সিস্টেম লস হয় তার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।
ফলে সিস্টেম লস কমানোর উপর ব্যাপক জোর দিয়েছেন অন্তবর্তীকালীন সরকার। এরইমধ্যে সিস্টেম লসের হার কমিয়ে আনতে জ্বালানি বিভাগ গ্যাস বিতরণ কম্পানি ভিত্তিক রোডম্যাপ তৈরি করে দিয়েছেন। রোডম্যাপ অনুযায়ী সিস্টেম লসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সুফলও মিলছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) জ্বালানি বিভাগে গ্যাসের সিস্টেম লস কমিয়ে আনার বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সভাপতিত্ব করেন।
কামরাঙার অনেক গুণ, দূরে থাকবেন যারা
জ্বালানি বিভাগের কম্পানিভিত্তিক রোডম্যাপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণের দায়িত্ব গ্যাস ট্রান্সমিশন কম্পানি অব বাংলাদেশসহ (জিটিসিএল) সাতটি গ্যাস বিতরণ কম্পানির সিস্টেম লস হ্রাস করতেই চলতি অর্থবছরের জানুয়ারিতে এই রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে বিতরণ কম্পানিগুলো অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে অভিযান ও পাইপলাইন উচ্ছেদ এবং পাইপলাইনে লিকেজ মেরামত কাযক্রম পরিচালনা করছে গ্যাস বিতরণ কম্পানিগুলো।
রোডম্যাপের তথ্য বলছে, জিটিসিএলের গত জানুয়ারিতে সিস্টেম লস ছিল ২.২৩ শতাংশ।
যা ফেব্রুয়ারিতে কমিয়ে ১.১৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৬ সালের জুনে সিস্টেম লস ১ শতাংশে নামিয়ে আনা। তিতাস গ্যাসের গত জানুয়ারিতে সিস্টেম লস ছিল ১০.৫৩ শতাংশ। যা কমিয়ে ফেব্রুয়ারিতে ৯.২১ শতাংশে আনা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ২০২৬ সালের জুনে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা।
বাখরাবাদ গ্যাসের সিস্টেম লস ছিল ১৩.৬০ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ৯.৪৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। ২০২৬ সালের জুনে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা। কর্ণফুলী গ্যাস ফিল্ডের জানুয়ারিতে সিস্টেম লস ছিল ৪.৬০ শতাংশ। যা ২.৫৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ১.৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। জালালাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল ও সুন্দরবন গ্যাস ফিল্ডের সিস্টেমও রোডম্যাপ কার্যক্রমের মাধ্যমে কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে।
সোলসের ৫০ বছর পূর্তিতে চট্টগ্রামে কনসার্ট ২ মে, টিকিট ৭ হাজার টাকা
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বুধবার গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৬৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে গতকাল ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। মোট দুই হাজার ৬৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এক হাজার ৮৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে ৮৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
জানতে চাইলে জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব মনির হোসেন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশীয় কূপগুলো থেকে গ্যাসের উত্পাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহ বাড়াতে ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে সিস্টেম লসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ গ্যাস অপচয় হচ্ছে। তাই আমরা সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে জোরো উদ্যোগ নিয়েছি। এই সিস্টেম লস কমিয়ে আনতে পারলে এলএনজি আমদানির উপর চাপ কমবে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিরও প্রয়োজন পড়বে না।’
না বলে আম পাড়ায় শিশুকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে সিস্টেম লসের পরিমাণ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি এবং এটি মোটেও সিস্টেম লস নয়। গ্যাসের অপব্যবহার ও চুরিকে সিস্টেম লস বলে চালিয়ে দিচ্ছে বিতরণ কম্পানিগুলো। এর দায়ভার কোনো না কোনোভাবে সাধারণ গ্রাহকের কাঁধেই পড়ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সিস্টেম লস কত হবে, এর একটা আন্তর্জাতিক হার রয়েছে। একটা শতকরা হিসাব থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই মানদণ্ড নেই। গ্যাসের সরবরাহ এবং বিক্রির মধ্যে যে পার্থক্য হয়, এর সবটাই গ্রাহকের ঘাড়ে চাপানো হয়।