ছবিসূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
৫ মে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সংশোধিত ওয়াকফ আইন অনুযায়ী সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিল বা রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। এই সময়ের মধ্যে ওয়াকফ-বাই-ইউজারসহ কোনো সম্পত্তি বাতিল করবে না কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ আইনের শুনানিতে এ কথা জানান সরকারি পক্ষের সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা। মোদি সরকার অস্বস্তি এড়াতে চাপের মুখে সুরও নরম করতে বাধ্য হলো বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সরকারকে। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের তিনটি ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিল বা রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে কি না, ওয়াকফ সম্পত্তি বাতিল করা যাবে কি না এবং ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে যেখানে বিবাদ রয়েছে সেখানে জেলাশাসকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে কি না?
এই প্রশ্নে স্থগিতাদেশ দেওয়ার সম্ভবনাও তৈরি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সলিসিটর জেনারেল এই তিনটি প্রশ্নের মধ্যে দুটি ক্ষেত্রেই আপাতত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন।
কংগ্রেস নেতা ও প্রবীণ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সংশোধিত আইনকে ‘নৈতিক ভাবে অন্তঃসারশূন্য’ বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘এটি সংস্কার নয়। সংস্কারের মুখোশে প্রতিশোধস্পৃহা। এই কাজ পূর্বপরিকল্পিত এবং একটি রাজনৈতিক কৌশল। এই সংশোধন সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।
’
সে কারণেই এই আইনকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে পরতে হয়েছে বলে জানান তিনি। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘যে কোনো আইন পাশ হলেই তা আদালতে যেতে পারে। আইনসভায় পাশ হওয়া আইন আদালতের ঊর্ধ্বে নয়। পাশ হওয়া আইন নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে হলে আদালত ছাড়া আর কোথায় যাবে মানুষ?’
সংশোধিত ওয়াকফ আইন ছাড়াও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনসহ একাধিক বিল আইনসভায় পাশ হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, সরকার যখনই সাংবিধানিক পরিকাঠামোকে উড়িয়ে দিয়ে আইন প্রণয়ন করবে, তখনই সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খাবে।
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার বার বার এই কাজ করছে আর সেই কারণেই আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে মানুষকে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সংবিধানের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করা যায় না। এই বিলের ক্ষেত্রে মুসলিমদের ওপর রোড রোলার চালাতে চেয়েছিল সরকার। দেশের সংবিধান মুসলিমদের যে অধিকার দিয়েছে এই আইন তার পরিপন্থী। সে কারণেই পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলো সরকার।’
আইন যখন চ্যালেঞ্জের মুখে
আইনসভায় পাশ হওয়া আইন বার বার আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পরে। কোন কোন ক্ষেত্রে পাশ হওয়া আইন আদালতে যায়?
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরিন্দম দাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সংসদে আইন পাশ হলেও সেই আইন দেশের সাংবিধানিক পরিকাঠামোর পরিপন্থী কি না তা বিচার করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সংবিধান প্রত্যেক ধর্মকে এবং ধর্মীয় ট্রাস্ট বা প্রতিষ্ঠানকে ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘নতুন পরিবর্তিত ওয়াকফ আইন সেই অধিকারকে খর্ব করছে কি না, তা দেখবে উচ্চতম আদালত। সরকার পক্ষের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের কাছে তাদের লিখিত বক্তব্য পেশ করতে কিছুদিন সময় চেয়েছেন। আদালত তা মেনে নিয়েছে। এর মধ্যে, অর্থাৎ পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সংশোধিত আইন প্রণয়ন না করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অ্যাটর্নি জেনারল এবং সলিসিটার জেনারল তা মেনে নিয়েছেন।’
কলকাতা হাইকোর্টের অপর এক আইনজীবী সরসিজ দাশগুপ্ত জানান, দেশের সংবধান মানুষকে যে মৌলিক অধিকার দিয়েছে আইন যদি তার পরিপন্থী হয় তাহলে সুপ্রিম কোর্ট সেই আইনের ওপর স্থগিতাদেশ দিতে পারে। এমনকি বাতিলও করতে পারে।’ এ ছাড়া আইনসভায় কোনো বিল যদি নিয়ম না মেনে প্রস্তাবিত বা পাশ হয়, সেক্ষেত্রেও হস্তক্ষেপ করতে পারে আদালত।